ঢাকা , শনিবার, ১০ মে ২০২৫ , ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার কারাগারে আইভী তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ উত্তাল শাহবাগ, যেন ফিরে এসেছে ‘জুলাই’ নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণই রাস্তায় নামবে- ফারুক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে কঠোর শাস্তিÑ নৌ-উপদেষ্টা সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জেলায় ৬ জনের মৃত্যু হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী লিখে সংবাদ, খুলনায় পত্রিকা অফিসে আগুন ময়মনসিংহে হত্যার আসামির ছুরিকাঘাতে যুবক খুন টাঙ্গাইলে চলন্ত মোটরসাইকেলে ককটেল নিক্ষেপ দুই ভাই আহত পেঁয়াজ-ডিম-সবজির দাম চড়া নাভিশ্বাসে ক্রেতা এআই দক্ষতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ পুঠিয়ায় প্রশাসনের যোগসাজশে অবৈধ পুকুর খননের হিড়িক আধুনিকতার প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার মাটির চুলা স্থানীয়দের বাধায় পিছু হটলো বিএসএফ মৌলভীবাজারে সীমান্তে ১৫ জনকে ‘পুশইন’ বিএসএফের আমতলীতে দুই বছরে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে আইনজীবীর লাশ উদ্ধার আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন চয়নিকা চৌধুরী রিমান্ড শেষে কারাগারে পলক

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জাল থেকে বেরোতে পারছে না সরকার

  • আপলোড সময় : ০৯-০৫-২০২৫ ০৭:০২:২৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৫-২০২৫ ০৭:০২:২৩ অপরাহ্ন
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জাল থেকে বেরোতে পারছে না সরকার
* বঞ্চনার শিকার হয়েছেন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা
* অপ্রাপ্তির হতাশায় প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে
* রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকারি কর্মকর্তারা কিছুটা আশার আলো দেখলেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ওই চক্কর থেকে বেরোতে পারছে না
স্টাফ রিপোর্টার
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বিগত সরকারের মতো প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের চক্কর থেকে বেরোতে পারছে না। আর দীর্ঘকাল ধরে চলমান এ চক্করে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা। তাদের অপ্রাপ্তির হতাশায় প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকারি কর্মকর্তারা কিছুটা আশার আলো দেখলেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ওই চক্কর থেকে বেরোতে পারছে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পদোন্নতি প্রত্যাশীরা প্রশাসনে আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চান না। জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই অবসরে যাওয়া ২২ কর্মকর্তাকে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। শুরুতেই প্রশাসনের বর্তমান কর্মকর্তারা এ নিয়ে আপত্তি তুললেও ধোপে টেকেনি তাদের আপত্তি। বরং সংশ্লিষ্টরা দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ওসব নিয়োগ জরুরি বলে যৌক্তিকতা দেখান। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক ওই নিয়োগের ফলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভ এখনো নিরসন হয়নি। বরং অনেকের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া বর্তমান সরকারের বয়স এখন প্রায় ৯ মাস। ইতিমধ্যে কর্মকর্তাদের মধ্যে কে যোগ্য কে অযোগ্য তা নিরূপণের জন্য যথেষ্ট সময় গেছে। এখন যোগ্যদের খুঁজে সচিব পদে দায়িত্ব দেয়া প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, বিগত ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক আদেশে সাবেক পাঁচ অতিরিক্ত সচিবকে দুই বছরের জন্য সচিব পদে নিয়োগ দিয়ে নতুন করে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগের রেওয়াজ শুরু করে। ওই আদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগে এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ পাওয়া ওই পাঁচ কর্মকর্তা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা। তারা কয়েক বছর আগেই চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করে যাবতীয় সুবিধাসহ তারা অবসরে গিয়েছিলেন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ধারা ওই পাঁচ কর্মকর্তায় আটকে থাকেনি। তাছাড়া প্রশাসনের শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে শুরু করে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ২২টি মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক সচিব বসানো হয়েছে। আর চুক্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বারবার বলা হচ্ছে, বিগত সরকারের আমলে এই কর্মকর্তারা বঞ্চিত ছিলেন। তবে বাস্তবে এ বক্তব্যের পক্ষধারীদের মতে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সচিবরা আওয়ামী লীগের সময়ও এ পদে আসার জন্য যোগ্য ছিলেন; কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় তখন কপাল পুড়েছে তাদের। তাই তাদের প্রশাসনে ডেকে এনে সচিব করা যৌক্তিক। কিন্তু প্রশাসনের অনেকেই এমন দাবির সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের মতে, অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কেউ অবসরে গেলে তাকে বঞ্চিত বলা যায় না। সামপ্রতিক বাস্তবতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। গত কয়েক বছরে প্রশাসনের কার্যক্রম ডিজিটালাইজড (প্রযুক্তি নির্ভর) হয়েছে। প্রশাসন অনেক অনেক আপডেট ( হালনাগাদ)। চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া সচিবরা যেহেতু অনেক আগেই অবসরে গেছেন, তাই হালনাগাদ প্রশাসনের গতিপ্রকৃতি তাদের পক্ষে চট করে বুঝে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কাজকর্মে জটিলতা ও স্থবিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সীমিত সময়ের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া অনেক কর্মকর্তাই গা বাঁচিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন বলে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা মনে করেন। কারণ তাদের কার্যক্রমে উদ্ভাবনী চিন্তা কিংবা উৎকর্ষ বৃদ্ধির কোনো চেষ্টা প্রতিফলিত হচ্ছে না। প্রশাসন নিয়ে বিশদভাবে চিন্তার সময়ও তাদের নেই। বগত সরকারের আমলে প্রশাসনের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় দলকানা কর্মকর্তাদের বারবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। ওসব নিয়োগে কর্মকর্তাদের যোগ্যতা কিংবা দক্ষতার চেয়ে দলীয় আনুগত্য এবং দুর্নীতি-অনিয়মের পারদর্শিতাকেই বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাগিয়ে নেয়ার নজিরও রয়েছে। বহু সমালোচনা ও কেলেঙ্কারির পরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রবণতা থামেনি। বর্তমানেও এর ব্যত্যয় হচ্ছে না।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছে, তাতে চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগ না দেয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তবে যোগ্যতার বিচার কম হয়েছে। স্বজনপ্রীতি ও আঞ্চলিকতা বিবেচনা করে নিয়োগ দেয়ায় প্রশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা দেখাতে পারেনি। অর্থাৎ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিতে জনপ্রশাসন খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যোগ্য লোক বাছাই করা উচিত।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স